কোথায় স্বর্গ কোথায় নরক, কে বলে তা বহুদূর?
মানুষের মাঝে স্বর্গ নরক মানুষেতে সুরাসুর
মূলভাব : স্বর্গ এবং নরক মানুষের মনের মধ্যেই বিদ্যমান। পৃথিবীর শুরু থেকে স্বর্গ-নরকের কল্পিত অস্তিত্ব নিয়ে আমাদের কৌতূহলের শেষ নেই। কিন্তু আমাদের এ চলমান জীবনেই আমরা স্বর্গ-নরকের অবস্থিতি অনুভব করি।
সম্প্রসারিত ভাব : অপার্থিক জগতে স্বর্গ ও নরক দুইই বিপরীতধর্মী স্থান। যুগ-যুগান্তরের ধর্মীয় বিশ্বাস অনুযায়ী মানুষ মনে করে-পৃথিবীর বহু ওপরে অনন্ত জ্যোতিপুঞ্জের মাঝে স্বর্গের অবস্থান আর এক ভয়ঙ্কর অন্ধকার স্থানে নরক বিরাজিত। এ জীবন সাঙ্গ হলেই কেবল সেসব দেখবার সৌভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্য তার হবে। হয়ত এসবের জন্য তাকে অপেক্ষা করতে হবে দীর্ঘ সময়, পাড়ি দিতে হবে যোজন যোজন পথ। সকল ধর্মেই স্বর্গকে এক অপূর্ব সুষমামণ্ডিত স্থানরূপে গণ্য করা হয়েছে। কেবলমাত্র পুণ্যাত্মাগণই এখানে প্রবেশের অধিকার পাবেন। আর যারা দুরাত্মা, যারা পাপাচারী তারা নিক্ষিপ্ত হবে নরকের ভয়ঙ্কর অগ্নিকুণ্ডলির মাঝে। মানুষের এ প্রচলিত বিশ্বাসের প্রতি কবি অনুরক্ত নন। কবি মনে করেন স্বর্গ এবং নরক পারলৌকিক কোনো বস্তু নয়। এ পৃথিবীতেই স্বর্গ এবং নরক বর্তমান। স্নেহ, প্রেম, পারস্পরিক সৌহার্দ এবং সম্প্রীতির বন্ধনে এ ধূলোমাখা মাটির পৃথিবী স্বর্গ হয়ে উঠতে পারে। আবার ক্রোধ, লোভ, মোহ ইত্যাদি রিপু দ্বারা তাড়িত হয়ে মানুষ এ পৃথিবীকে বানাতে পারে নরকের আঁধার। ভালো কাজ করলে মানুষের প্রশান্ত মনে এক অনাবিল শান্তি নেমে আসে। স্বর্গীয় হাসিতে তার মুখমণ্ডল তখন উদ্ভাসিত হয়। আর মন্দ কাজ করলে বিবেকের দ্বারা সে পদে পদে লাঞ্ছিত হয়।
এ জগতে মানুষ ভালো কাজের মাধ্যমে স্বর্গের সুধা এবং খারাপ কাজের মাধ্যমে নরকের যন্ত্রণা ভোগ করে থাকে। শান্তি আর করুণার ধারা যদি পৃথিবীতে নেমে আসে তাহলে দূরের স্বর্গ আর দূরে থাকে না।